জানুয়ারি থেকে রেশনে চাল কমে গম বাড়ছে, কেন্দ্রের নতুন নির্দেশ

ration rice wheat distribution change january india


জানুয়ারি থেকে রেশন ব্যবস্থায় বড় বদল: চাল কমে গম বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদন:
আগামী বছরের শুরু থেকেই দেশের National Food Security Act (NFSA)-এর আওতায় থাকা রেশন গ্রাহকদের খাদ্যশস্য বরাদ্দে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। দীর্ঘদিন ধরে যে রেশন প্যাটার্ন চালু ছিল, সেখানে এবার চালের পরিমাণ কমিয়ে গমের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার আপত্তি জানালেও, কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রক স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে পূর্বের মতো বরাদ্দ রাখা সম্ভব নয়। ফলে জানুয়ারি থেকেই নতুন নিয়ম কার্যকর হবে।

📌 বর্তমানে রেশন গ্রাহকরা কী পাচ্ছেন?

বর্তমানে NFSA-র অধীনে থাকা SPH ও PHH শ্রেণির রেশন গ্রাহকরা মাসে মোট ৫ কেজি খাদ্যশস্য পান। এর মধ্যে—

  • 🌾 গম: ২ কেজি
  • 🍚 চাল: ৩ কেজি

অন্যদিকে Antyodaya Anna Yojana (AAY) গ্রাহকরা পরিবার পিছু মাসে মোট ৩৫ কেজি খাদ্যশস্য পান—

  • 🍚 চাল: ২০ কেজি
  • 🌾 গম: ১৫ কেজি

এই বরাদ্দ ব্যবস্থাই এতদিন ধরে চলে আসছিল।

জানুয়ারি থেকে কী পরিবর্তন হচ্ছে?

২০২6 সালের ১ জানুয়ারি থেকে কেন্দ্রীয় সরকার নতুন রেশন বরাদ্দ কাঠামো চালু করতে চলেছে।

🔹 সাধারণ রেশন গ্রাহকদের জন্য:

মাসে মোট ৫ কেজির মধ্যে—

  • 🌾 গম: ৩ কেজি
  • 🍚 চাল: ২ কেজি

🔹 অন্ত্যোদয় পরিবারগুলির জন্য:

মাসে মোট ৩৫ কেজির মধ্যে—

  • 🌾 গম: ২০ কেজি
  • 🍚 চাল: ১৫ কেজি

অর্থাৎ, চাল কমিয়ে গম বাড়ানো হচ্ছে—এই পরিবর্তনই সবচেয়ে বড় বিষয়।

📌 Related Article

  • ration rice wheat news
  • ration card update 2026
  • NFSA ration change
  • rice wheat price impact
  • government ration scheme India
  • food security scheme update

রাজ্য সরকারের আপত্তি কেন?

রাজ্য সরকারের তরফে আগের মতো চালের পরিমাণ বজায় রাখার জন্য কেন্দ্রকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। এর পিছনে রয়েছে একাধিক বাস্তব কারণ।

রাজ্যের রেশন ব্যবস্থায় যে চাল সরবরাহ করা হয়, তার বড় অংশই রাজ্যের চাষিদের কাছ থেকে Minimum Support Price (MSP)-এ কেনা ধান থেকে উৎপাদিত। এই ধান সংগ্রহের মাধ্যমে—

  • কৃষকের ন্যায্য দাম নিশ্চিত হয়
  • রাজ্যের খাদ্য মজুত বজায় থাকে
  • মিড ডে মিল ও অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্প চালু থাকে

চালের বরাদ্দ কমলে এই পুরো সাপ্লাই চেইনে প্রভাব পড়বে।

🌾 চাষিদের উপর কী প্রভাব পড়বে?

চলতি ২০২5-26 খরিফ মরশুমে রাজ্য সরকার প্রায় ৬৭ লক্ষ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে।
এর মধ্যে—

  • কেন্দ্রীয় পুলের জন্য: প্রায় ৪১ লক্ষ টন
যদি কেন্দ্র চালের চাহিদা কমিয়ে দেয়, তাহলে—
  • কেন্দ্রীয় পুলে কম চাল যাবে
  • রাজ্যের অতিরিক্ত ধান অবিক্রীত থাকতে পারে
  • শেষ পর্যন্ত ক্ষতির মুখে পড়বেন চাষিরা

এই কারণেই রাজ্য সরকার চালের বরাদ্দ কমানোর বিরোধিতা করছে।

কেন্দ্রের যুক্তি কী?

কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রকের বক্তব্য অনুযায়ী—

  • রাজ্য চাইলে চালের পরিমাণ বাড়াতে পারে
  • তবে গমের বরাদ্দ কমানো যাবে না
  • কেন্দ্র যে পরিমাণ খাদ্যশস্য দেয়, তার নিচে নামা যাবে না

মূলত বর্তমানে কেন্দ্রের কাছে গমের অতিরিক্ত স্টক (excess wheat stock) থাকায়, সেটি ব্যবহার করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

রেশন ডিলার সংগঠনের বিকল্প প্রস্তাব

রেশন ডিলারদের সর্বভারতীয় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু জানিয়েছেন—

“রাজ্য সরকার আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী ধান সংগ্রহ করুক। অতিরিক্ত চাল হলে তা FCI-কে দেওয়া হোক, যাতে অন্য রাজ্যে সরবরাহ করা যায়।”

তাঁদের মতে, এতে—

  • চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না
  • রাজ্যের খাদ্য ব্যবস্থা স্থিতিশীল থাকবে
  • কেন্দ্রের গম স্টক ব্যবস্থাপনাও সহজ হবে

সাধারণ মানুষের উপর কী প্রভাব পড়বে?

এই পরিবর্তনের ফলে—

  • যারা চাল বেশি পছন্দ করেন, তাঁদের অসুবিধা হতে পারে
  • গমভিত্তিক খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত না থাকা পরিবারগুলিকে মানিয়ে নিতে হবে
  • বাজারে চাল ও গমের দামে প্রভাব পড়তে পারে

তবে সরকার দাবি করছে, কেউ খাদ্য নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত হবেন না

রেশন ব্যবস্থায় এই পরিবর্তন শুধু খাদ্যশস্যের অঙ্ক বদলের বিষয় নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে—

  • কৃষকের ভবিষ্যৎ
  • রাজ্য ও কেন্দ্রের আর্থিক ভারসাম্য
  • সাধারণ মানুষের খাদ্যাভ্যাস

আগামী দিনে রাজ্য সরকার কীভাবে এই নতুন কাঠামোর সঙ্গে মানিয়ে নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।




Post a Comment

0 Comments