জুবিন গার্গ নেট ওয়ার্থ $8M: গান, সিনেমা ও উত্তরাধিকার
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম শোকাহত। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী, গায়ক, সুরকার ও অভিনেতা জুবিন গার্গ আর নেই। মাত্র ৫২ বছর বয়সে তিনি সিঙ্গাপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তাঁর অকাল মৃত্যু শুধু আসাম নয়, সমগ্র ভারতবর্ষকে শোকে ডুবিয়েছে।
তবে তিনি রেখে গেছেন এক অমূল্য উত্তরাধিকার। ২০২৫ সালে তাঁর নেট ওয়ার্থ প্রায় ৮ মিলিয়ন ডলার (₹৬৬ কোটি টাকা)। কিন্তু টাকার অঙ্ক নয়, তাঁর প্রকৃত সম্পদ ছিল অগণিত কালজয়ী গান, সিনেমা, সামাজিক কাজ এবং মানুষের ভালোবাসা।
▶️ Watch the Tribute Video: Zubeen Garg at Gauhati University
শৈশব ও সংগীতের সূচনা
১৯৭২ সালের ১৮ নভেম্বর মেঘালয়ের তুরা শহরে জন্ম হয় জুবিন গার্গের। পরিবার থেকেই পান সাংস্কৃতিক প্রেরণা—বাবা মোহিনী মোহন বorthakur ছিলেন কবি ও গীতিকার, আর মা ইলি বorthakur ছিলেন গায়িকা ও নৃত্যশিল্পী।
শৈশবেই তিনি শিখে ফেলেন তবলা, ঢোল, গিটার বাজানো। গুরু রবীন ব্যানার্জি এবং গুরু রোমণী রায়ের কাছে সংগীতের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে প্রথম গান বাঁধেন, আর ১৯৯২ সালে যুব উৎসবে স্বর্ণপদক পান। সেই বছরই তাঁর প্রথম অ্যালবাম অনামিকা মুক্তি পায়, যা ব্যাপক জনপ্রিয় হয়।
বলিউডে ব্রেকথ্রু – “ইয়া আলি”
২০০৬ সালে বলিউড ছবির গ্যাংস্টার থেকে তাঁর গাওয়া “ইয়া আলি” গানটি তাঁকে সারাদেশে রাতারাতি তারকা বানিয়ে তোলে।
এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। জুবিন গাইলেন ৪০টিরও বেশি ভাষা ও উপভাষায় ৩২,০০০-এরও বেশি গান—যা ভারতীয় সংগীত জগতে এক রেকর্ড।
জুবিন গার্গের $8 মিলিয়ন নেট ওয়ার্থ
জুবিনের উপার্জনের উৎস ছিল বহুমুখী—
- 🎤 প্লেব্যাক সিঙ্গিং – হাজার হাজার গান হিন্দি, অসমীয়া, বাংলা, তামিল, তেলেগু ইত্যাদিতে।
- 🎬 সিনেমা – অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক ও সুরকার হিসেবে কাজ।
- 🎶 লাইভ কনসার্ট – দেশ-বিদেশে হাজারো দর্শকের সামনে অনুষ্ঠান।
- 📀 অ্যালবাম বিক্রি ও কপিরাইট।
- 🏠 সম্পত্তি ও গাড়ি – আসাম ও মুম্বাইতে একাধিক বাড়ি, বিলাসবহুল গাড়ি।
ফলে ২০২৫ সালে তাঁর মোট সম্পদ $8 মিলিয়ন (₹৬৬ কোটি টাকা) ছুঁয়েছিল।
বিলাসবহুল জীবনযাপন
খ্যাতি ও উপার্জনের পাশাপাশি জুবিন ভালোবাসতেন বিলাসিতা।
- 🚘 গাড়ি: BMW X5, Mercedes-Benz, Range Rover Velar, Isuzu SUV
- 🏍️ মোটরবাইক: Royal Enfield, Ducati সহ একাধিক বাইক
- 🏡 বাড়ি: গৌহাটি ও মুম্বাইতে বিলাসবহুল বাড়ি
তবুও, তিনি সর্বদা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যেই থেকেছেন।
সমাজসেবা ও দাতব্য কাজ
জুবিন শুধু শিল্পী নন, তিনি ছিলেন একজন সমাজসেবী। তাঁর প্রতিষ্ঠিত কালাগুরু আর্টিস্ট ফাউন্ডেশন—
- দরিদ্রদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা
- মেধাবী কিন্তু আর্থিকভাবে দুর্বল শিক্ষার্থীদের বৃত্তি
- সংস্কৃতি ও শিল্পের বিকাশে সহায়তা
প্রতিটি প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা জনহিতকর কাজে তিনি ছিলেন অগ্রণী।
বিতর্কিত মন্তব্য ও সাহসী চরিত্র
জুবিনের স্পষ্টভাষী স্বভাব তাঁকে বারবার বিতর্কে ফেলেছে।
- ২০১৯ সালে, তিনি বলেছিলেন, “ব্রাহ্মণদের মেরে ফেলা উচিত”—যা নিয়ে মামলা হয়েছিল।
- ২০২৪ সালে, তাঁর মন্তব্য “কৃষ্ণ শুধু মানুষ ছিলেন” প্রবল সমালোচনা ডেকে আনে।
তবুও, ভক্তরা তাঁকে ভালোবেসেছে তাঁর অকপটতা ও সত্যবাদিতার জন্য।
অসমীয়া সিনেমায় অবদান
গানের পাশাপাশি সিনেমাতেও তিনি ছিলেন সমান সফল।
- 🎥 হিয়া দিয়া নিয়া (২০০০) – অসমীয়া সিনেমার নতুন দিগন্ত খুলে দেয়।
- 🎥 মন যায় (২০০৮) – সমালোচকদের প্রশংসিত সিনেমা।
- 🎥 মিশন চায়না (২০১৭) – নিজে প্রযোজিত ও পরিচালিত সুপারহিট ছবি।
- 🎥 কাঞ্চনজঙ্ঘা (২০১৯) – ব্যবসায়িক সাফল্য।
কালজয়ী গান ও উত্তরাধিকার
জুবিনের গান শুধু সুর নয়, ছিল আবেগের প্রতীক।
মায়া, উভতি সুৱাঁ, মুগ্ধ হিয়া মুৰ—এসব গান প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানুষের মনে বেঁচে থাকবে।
তাঁর সংগীত বিদ্রোহ, ভালোবাসা আর আশার প্রতীক হয়ে উঠেছিল।
আন্তর্জাতিক জনপ্রিয়তা
ভারতের বাইরেও তাঁর অগণিত ভক্ত ছিল। যুক্তরাজ্য, আমেরিকা, দুবাই, সিঙ্গাপুর, বাংলাদেশ– সর্বত্র তাঁর কনসার্টে হাজারো মানুষ ভিড় জমাত।
পুরস্কার ও স্বীকৃতি
তাঁর দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার—
- জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (সঙ্গীত পরিচালনায়)
- ফিল্মফেয়ার পুরস্কার (ইস্ট)
- প্ৰাগ সিনেমা অ্যাওয়ার্ডস
- আসাম রাজ্যের বিশেষ সাংস্কৃতিক সম্মাননা
শেষ দিন ও অকাল মৃত্যু
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, সিঙ্গাপুরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৫২ বছর বয়সে জুবিন গার্গের জীবনাবসান ঘটে।
তাঁর মৃত্যুতে আসামজুড়ে শোকের সাগর নেমে আসে। রাজনৈতিক নেতা, শিল্পী, ভক্ত—সবাই মোমবাতি জ্বালিয়ে, গান গেয়ে তাঁকে স্মরণ করেন।
জুবিন গার্গের চিরন্তন উত্তরাধিকার
জুবিন গার্গ শুধু গায়ক নন, তিনি ছিলেন একটি যুগের প্রতীক। তাঁর গান, সিনেমা, মানবিকতা এবং অকপট চরিত্র তাঁকে করে তুলেছে চিরস্মরণীয়।
যতদিন আসামের সংগীত থাকবে, ততদিন জুবিন গার্গ থাকবেন মানুষের হৃদয়ে।
0 Comments